প্রকাশিত: ০৯/০৪/২০১৮ ৮:৫৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:২৫ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। গতকাল পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোট ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯৯ জনের নিবন্ধন করা হয়েছে।

যে কোনো সময় তা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুপালং, থাইংখালী ও নোয়াপাড়ায় ৩টি কেন্দ্রে ১৫টি বুথে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। এর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫ লাখ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ১৬ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
চট্টগ্রাম পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় জানান, ‘রোহিঙ্গা নিবন্ধন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এখনো কিছু সংখ্যক নিবন্ধনের বাকি রয়েছে। নতুন আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ’

গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন নিবন্ধন করা হয় মাত্র ১২ জনকে।

দ্বিতীয় দিনে ১৫০ জন ও তৃতীয় দিনে ৬৩৮ জনের নিবন্ধন করা হয়। চতুর্থ দিনে দুটি বুথে নিবন্ধন করা হয় আরও এক হাজার রোহিঙ্গাকে। এরপর কুতুপালংয়ে ৬টি ও নয়াপাড়ায় ৪টি বুথে কাজ শুরু হয়। পরে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বৈঠক করে জনবল বাড়ানো হয়। এক পর্যায়ে ৫০টি ইউনিটে কাজ শুরু হয়। ওই সময় নিবন্ধনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গাদের ছবিযুক্ত নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তিন-চার মাস সময় লাগবে। কিন্তু এখন প্রায় সাত মাস চলছে। নিবন্ধন কার্যক্রমও চলছে। রহিম নামে এক রোহিঙ্গার নিবন্ধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। নিবন্ধন কার্ডে দেখা যায়, পিতার নাম : নাজির আহমেদ, মাতা : নূর বেগম, জন্মতারিখ : ১৯৯৪ সালের ৮ আগস্ট, ধর্ম : ইসলাম, জন্মস্থান : মিয়ানমার, দেশ : মিয়ানমার, জাতীয়তা : মিয়ানমার (রোহিঙ্গা), নিবন্ধনের তারিখ : ৯ সেপ্টেম্বর-২০১৭ এবং ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাম : চরকম্বো, থানা : মংডু, জেলা : আকিয়ান ও দেশ : মিয়ানমার। ডান পাশে তার ছবি যুক্ত করা হয়েছে। সাইফুল্লাহ নামের একজনের নিবন্ধন কার্ড ঘেঁটে দেখা যায়, পরিচয়পত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোহিঙ্গা পিপলস রেজিস্ট্রেশন’। তাতে নাম, বয়স, পিতা, মাতা, জন্ম তারিখ, ধর্ম, জন্মস্থান, দেশ, জাতীয়তা, নিবন্ধনের তারিখ, ঠিকানাসহ ১২টি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়তা মিয়ানমার এবং জন্মস্থান- দেশও উল্লেখ করা হয়েছে মিয়ানমার। আর ধর্ম ইসলাম। তবে কয়েকজন হিন্দু রোহিঙ্গার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাতে নিজেদের ধর্ম পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। কুতুপালংয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ভাষাগত সমস্যায় নিবন্ধনে একটু বিলম্ব হয়েছে। এ জন্য দোভাষীও নিয়োগ করা হয়। নইলে আরও আগেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যেত। এ ছাড়া এখনো বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কিছু কিছু আসছে। আবার কেউ কেউ কক্সবাজারের বাইরেও চলে গেছে। একটি দালাল শ্রেণিও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনে বাধা দিয়েছে। জানা যায়, ১১ সেপ্টেম্বর নিবন্ধন শুরু হলেও জটিলতা দেখা দেয় রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিয়ে।
রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ মিয়ানমারে নেই—জাতিসংঘ : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ মিয়ানমারে এখনো তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-মহাসচিব উরসুলা মুলার। ছয় দিনের সফরে ১ এপ্রিল মিয়ানমার যান মুলার। ইয়াঙ্গুনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুলার বলেন, আমি যা দেখেছি এবং লোকজনের কাছে ?যা শুনেছি তাতে সেখানে (রোহিঙ্গাদের) স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের সুরক্ষা নিয়েও উদ্বেগ আছে, এখনো তারা গৃহহীন হচ্ছে… সেখানকার পরিস্থিতি কোনোভাবেই ফেরার উপযোগী নয়।

পাঠকের মতামত